Header Ads

test

অনীশ ২য় অংশ


অনীশ ২য় অংশ



 ডাক্তার সাহেবের কথা সত্যি।
অপারেশন শেষ হবার পরপরই খবর ছড়িয়ে পড়ল রূপা চৌধুরী এই হাসপাতালে আছেন। হাজার হাজার লোক আসতে থাকল। সে এক দর্শনীয় ব্যাপার!
মিসির আলি খবর পেলেন অপারেশন ঠিকঠাকমতো হয়েছে। মেয়েটি ভাল আছে। এটিও আনন্দিত হবার মতো ব্যাপার। তার দিয়ে-যাওয়া খাতাটা পড়া শুরু করা জায়। পড়তে ইচ্ছা করছে না। অসুস্থ অবস্থায় কোনো কিছুতেই মন বসে না।
ক্যাট স্ক্যান করা হয়েছে। কিছু পাওয়া যায়নি। তারচেয়েও বড় কথা লিভারের সমস্যা বলে যা ভাবা হয়েছিল দেখা যাচ্ছে সমস্যা সেখানে না। মেডিক্যাল কলেজের যে-অধ্যাপক চিকিৎসা করছিলেন, তিনি গতকাল বলেছেন – আপনার শরীরে তো কোনোঅসুখ পাচ্ছি না। অসুখটা আপনার মনে না তো?
মিসির আলি হেসে ফেললেন।
প্রফেসর সাহেব বললেন, ‘হাসছেন কেন? আপনি মনোবিদ্যার একজন ওস্তাদ মানুষ তা জানি- কিন্তু মনোবিদ্যার ওস্তাদ মানুষদের মনের রোগ হবে না এমন তো কোনো কথা নেই। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদেরও ক্যান্সার হয়। হয় না?’
‘অবশ্যই হয়। তবে মনের রোগ এবং জীবাণু বা ভাইরাস ঘটিত রোগকে এক লাইনে ফেলা ঠিক হবে না।’
‘আচ্ছা ফেলছি না। আপনাকে আমার যা বলার তা বললাম, আপনার অসুস্থতার কোনো কারণ ধরা যাচ্ছে না।’
‘আপনি কি আমাকে হাসপাতাল ছেড়ে দিতে বলছেন?’
‘শুধুশুধু কেবিনের ভাড়া গোনার তো আমি কোনো অর্থ দেখি না। অবশ্যি একটা উপকার হচ্ছে। বিশ্রাম হচ্ছে। যে-কোনো রোগের জন্যই বিশ্রাম একটা ভাল ওষুধ। সেই বিশ্রাম আপনি বাড়িতে গিয়েও করতে পারেন।’
‘তা পারি।’
‘আমি আপনাকে একটা পরামর্শ দিই মিসির আলি সাহেব?’
‘দিন।’
‘ময়মনসিংহের গ্রামে আমার সুন্দর একটা বাড়ি আছে। পৈতৃক বাড়ি যা সারাবছর খালি পড়ে থাকে। আপনি আমার ঐ বাড়িতে কিছুদিন থেকে আসুন-না!’
‘আপনার পৈতৃক বাড়িতে?’
‘হ্যাঁ।’
‘এই বিশেষ ফেভার আপনি কেন করতে চাচ্ছেন?আমি আপনার একজন সাধারণ রোগী। এর বেশি কিছু না। আপনিনিশ্চয়ই আপনার সব রোগীদের হাওয়া-বদলের জন্যে আপনার পৈতৃক বাড়িতে পাঠান না?’
‘না, পাঠাই না।’
‘আমাকে পাঠাতে চাচ্ছেন কেন?’
‘আমি যদি বলি মানুষ হিসেবে আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে তা হলে কি আপনার বিশ্বাস হবে?’
‘বিশ্বাস হবে না। যেসব গুণ একজন মানুষকে সবার কাছে প্রিয় করে তার কিছুই আমার নেই। আমি শুকনো ধরনের মানুষ। গল্প করতে পারি না। গল্প শুনতেও ভাল লাগেনা।’
ডাক্তার সাহেব উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন, ‘আমার বড় মেয়েটি আপনার ছাত্রী। তার ধারণা আপনি অসাধারণ একজন মানুষ। সে চাচ্ছে যেন আপনার জন্যে বিশেষ কিছু করা হয়।’
মিসির আলি হেসে ফেললেন। তাঁর ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে সম্পূর্ণ অন্য চোখে দেখে এটা তিনি লক্ষ করেছেন। যদিও তার কোনো কারণ বের করতে পারিনি। অন্য দশজন শিক্ষক যেভাবে ক্লাস নেন তিনিও সেভাবেই নেন। এর বেশি তো কিছু করেন না! তার পরেও তাঁর ছাত্রছাত্রীরা এরকম ভাবে কেন? রহস্যটা কী?
‘মিসির আলি সাহেব!’
‘জি।’
‘আমার বড় মেয়ের স্বামী ধনবান ব্যক্তি। আমারবড় মেয়ে চাচ্ছে তার খরচে আপনাকে বাইরে পাঠাতে যাতে সর্বাধুনিক চিকিৎসার সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন।
আপনিরেগে যাবেন কি না এই ভেবেই এ-প্রস্তাব এতক্ষণ দিই নি।’
‘আপনার বড় মেয়ের নাম কী?’
‘আমার মেয়ে বলেছে আপনি আমার নাম জানতে চাইলে নাম যেন আমি না বলি। সেতার নাম জানাতে চাচ্ছে না। আপনি কি আমার মেয়ের প্রস্তাবটি গ্রহণ করবেন?’
‘না, তবে আপনার প্রস্তাব গ্রহণ করব। আপনার পৈতৃক বাড়িতে কিছুদিন তাকব। বাড়ি নিশ্চয়ই খুব সুন্দর?’
‘হ্যাঁ, খুবই সুন্দর। সামনে নদী আছে। আপনার জন্যে নৌকার ব্যবস্থা থাকবে। ইচ্ছা করলে নৌকায় রাত্রিযাপন করতে পারবেন। পাকা বাড়ি। দোতলার বারান্দা বেশ বড়। বারান্দায় এসে দাঁড়ালে ঘরে যেতে ইচ্ছা করে না- এমন।’
মিসির আলি ক্লান্ত গলায় বললেন,‘প্রাকৃতিক দৃশ্য আমাকে তেমন আকর্ষণ করে না।’
‘গিয়ে দেখুন এখন হয়তো করবে। অসুস্থ মানুষকে প্রকৃতি খুবপ্রভাবিত করে। পরিবেশেরও রোগ-নিরাময়ের ক্ষমতা আছে। আমি কি ব্যবস্থা করব?’
‘করুন।’
‘দিন পাঁচেক সময় লাগবে। আমি একজন ডাক্তারের ব্যবস্থাও করব। আমার ছাত্র গৌরীপুর শহরে প্র্যাকটিস করে। তাকে চিঠি লিখে দেব যাতে তিন-চারদিন পরপর সে আপনাকে দেখে আসে। খাওয়াদাওয়া নিয়ে চিন্তা করবেন না। বজলু আছে। সে হচ্ছে একের ভেতর তিন। কেয়ারটেকার, কুক এবং দারোয়ান। এই তিন কাজেই সে দক্ষ। বিশেষ করে রান্না সে খুব ভাল করে। মাঝে মাঝে তার রান্নার প্রশংসা করবেন। দেখবেন সে কত খুশি হয়।’

ডাক্তার সাহেবের পৈতৃক বাড়ি বারোকাদায়।
ময়মনসিংহ-মোহনগঞ্জ লাইনের অতিথপুর ষ্টেশনে নেমে ছমাইল যেতে হয়। রিকশায়, দু-মাইল হেঁটে, এবং বাকি দু-তিন মাইল নৌকায়।
মিসির আলির খুবই কষ্ট হল। অতিথপুর থেকে রওনা হয়ে বেশ কয়েকবার মনে হল না গেলে কেমন হয়? শেষ পর্যন্ত পৌঁছলেন একটা মাত্র কারণে – ডাক্তার সাহেবনানান জোগাড়যন্ত্র করে রেখেছেন। লোকজনকে খবর দেয়া হয়েছে। এরপরে না-যাওয়াটা অন্যায়।
ডাক্তার সাহেবের পৈতৃক বাড়ি খুবই সুন্দর। সম্প্রতি চুনকাম করা হয়েছে বলেই বোধহয় – সবুজের ভেতর ধবধবে সাদা বাড়ি ঝকঝকে করছে। বাড়ি দেখে খুশি হবার বদলে মিসির আলির মন-খারাপ হয়ে গেল। এতবড় বাড়ি খালি পড়ে আছে। খাঁ খাঁ করছে। কোনো মানে হয়? বাড়ির জন্যে তো মানুষ নয়, মানুষের জন্যই বাড়ি।
বাড়ির সামনে নদী না- খালের মত আছে। অল্প পানি। সেই পানিতেই পানশি জাতীয় বিরাট এক নৌকা। বজলু হাসিমুখে বলল, ‘স্যার। নৌকা আপনার জন্যে। বড়আপা চিঠি দিয়েছে যেন প্রত্যেক বিকালে নৌকার মধ্যে আপনার চা দেই।’
‘ঠিক আছে, নৌকাতে চা দিও।’
‘আগামীকাল কী খাবেন স্যার যদি বলেন। মফস্বল জায়গা। আগে-আগে না বললে জোগাড়যন্ত্র করা যায় না। রাতের ব্যবস্থা আছে কইমাছ, শিংমাছ। মাংসের মধ্যে আছে কবুতরের মাংস। মাছের মাথা দিয়া মাষকালাইয়ের ডাল রানধা করছি।’
‘যথেষ্ট হয়েছে। দেখোবজলু, খাওয়াদাওয়া নিয়ে তুমি বেশি ব্যস্ত হয়ো না। খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে আমার আগ্রহ খুব কম। দুই পদের বেশি কখনো রান্না করবে না।’
বজলু সব ক’টা দাঁত বের করে হেসে ফেলল –
‘আপনি বললেতো স্যার হবে না। বড়আপাচিঠি দিয়ে দিয়েছেন – লিখেছেন স্যারের যত্নের যেন কোনো ত্রুতি না হয়। সবসময় খুব কম করে হলেও যেন প্রতি বেলা পাঁচ পদের আয়োজন হয়। আমি স্যার অনেক কষ্টে পাঁচ পদের ব্যবস্থা করেছি – কইমাছের ভাজি, শিংমাছের ঝোল, কবুতরের মাংস, বেগুন ভর্তা আর ডাল। আগামীকাল কি করি এই চিন্তায় আমি অস্থির।’
‘অস্থির হবার কোনো প্রয়োজন নেই বজলু। আপাতত চা খাওয়াও।’
‘তা হলে স্যার নৌকায় গিয়ে বসেন। বিছানা পাতা আছে। আপা বলে দিয়েছেন নৌকায় চা দেওয়ার জন্যে।’
মিসির আলি সাহেব নৌকাতেই বসলেন। তাঁর মন বলছে বজলু তাঁকে বিরক্ত করে মারবে। ভালবাসার অত্যাচার কঠিন অত্যাচার। একে গ্রহণও করা যায় না, বর্জনও করা যায় না।
নৌকায় বসে মিসির আলি একটামজার জিনিস লক্ষ করলেন। খাল বরাবর আমগাছগুলি টিয়াপাখিতে ভরতি। দশ-পনেরোটি নয় – শত শত। এরা যখন ওড়ে তখন আর এদের সবুজ দেখায় না। কালো দেখায়। এর মানে কী? টিয়া কালো দেখাবে কেন? চলমান সবুজ রঙ যদি কালো দেখায় তাহলে তো চলন্ত ট্রেনের সবুজ কামরাগুলিও কালো দেখানোরকথা। তা কি দেখায়? মিসির আলি মনে করতে পারলেন না। বজলুকে একবার পাঠাতে হবে চলন্ত ট্রেন দেখে আসার জন্যে। সে দেখে এসে বলুক।
প্রথম রাতে মিসির আলির ঘুম ভাল হল না। প্রকাণ্ড বড় খাট – তাঁর মনে হতে লাগল তিনিমাঠের মাঝখানে শুয়ে আছেন। বাতাসও খুব সমস্যা করতে লাগল। জানালা দিয়ে এক-একবার দমকা হাওয়া আসে আর তাঁর মনে হয় তাঁকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। মাঝরাতে দরজা-জানালা বন্ধ করে তিনি বুড়ির খাতা নিয়ে বসলেন।
আমার বাবা মারা যান যখন আমার বয়স পনেরো মাস।
বাবার অভাব আমি বোধ করিনি, কারণ বাবা সম্পর্কে আমার কোনোস্মৃতি নেই। স্মৃতি থাকলেই অভাববোধের ব্যাপারটা চলেআসত। আমাকে মানুষ করেছেন আমার মা। তিনি অত্যন্ত সাবধানি মহিলা। বাবার অভাব যাতে আমি কোনদিন বুঝতে না পারি তার সবরকম চেষ্টা তিনি বাবার মৃত্যুর পর থেকেই করে আসছেন। তিনি যা যা করেছেন তার কোনোটিই কোনো সুস্থ মহিলা করবেন না। মা হচ্ছেন একজন অসুস্থ, অস্বাভাবিক মহিলা। যেহেতু জন্ম থেকেই আমি তাঁকে দেখে আসছি, তাঁরঅস্বাভাবিকতা আমার চোখে ধরা পড়তে অনেক সময় লেগেছে।
বাবার মৃত্যুর পর ঘর থেকে তাঁর সমস্ত ছবি, ব্যবহারি জিনিস সরিয়ে ফেলা হয় – কিছু নষ্ট করে দেয়া হয়, কিছু পাঠিয়ে দেয়া হয় আমার দাদার বাড়িতে। মা’র যুক্তি ছিল – বাবার স্মৃতিজড়িত কিছু তাঁর চারপাশে রাখতে পারবেন না। স্মৃতির কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা তাঁর নেই।
বাবাকেমন ছিলেন, তিনি কী করতেন, কী গল্প করতেন এসব নিয়েও মা কখনো আমার সঙ্গে কিছু বলেননি। বাবার সম্পর্কে কিছু বলতে গেলেই তাঁর নাকি অসম্ভব কষ্ট হয়। মা এই কষ্ট থেকেক মুক্তি পাওয়ার জন্যে বাবার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সবকিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন। বাবার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবার সঙ্গেই সম্পর্ক ছিন্ন করলেন। আমার নাম ‘তিতলি’ যা বাবা আগ্রহ করে রেখেছিলেন তাও বদলানো হল। আমার নতুন নাম হল রূপা। তিতলি নাম মা বদলালেন, কারণ এই নাম তাঁকে বাবার কথা মনে করিয়ে দিত।
মা অসম্ভব রূপবতী। আরেকটি বিয়ে করাই মা’র জন্যে স্বাভাবিক ছিল। পাত্রের অভাব ছিল না। রূপবতীদের পাত্রের অভাব কখনো হয় না। মা বিয়ে করতে রাজি হলেন না। বিয়ের বিপক্ষে একটি যুক্তি দিলেন – যে-ছেলেটিকে বিয়ে করব তার স্বভাব-চরিত্র যদি রূপার বাবার চেয়ে খারাপ হয় তাহলে কখনো তাকে ভালবাসতে পারব না। দিনরাত রূপার বাবার সঙ্গে তার তুলনা করে নিজেই কষ্ট পাব, তাকেও কষ্ট দেব।সেতা ঠিক হবে না। আর যদি ছেলেটি রূপার বাবার চেয়ে ভাল হয় তা হলে রূপার বাবাকে আমি ক্রমে ক্রমে ভুলে যাব। তাও ঠিক হবে না। এই মানুষটিকে আমি ভুলতে চাই না।
আমার মামারা ছাপোষা ধরনের মানুষ। মাকে নিয়ে তাড়া দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। কন্যাসহ বোনের বোঝা মাথায় নেবারমতো সামর্থ্য বা ইচ্ছা কোনটাই তাঁদের ছিল না। তবু মা তাঁদের ঘাড়ে সিন্দাবাদের ভূতের মতো চেপে রইলেন। কিছুদিন তিনি এক ভাইয়ের বাড়িতে থাকেন, তারপর যান অন্য ভাইয়ের বাসায়। মামারা ধরেই নিলেন মা তাঁর জীবনটা এভাবেই পার করবেন। তাঁরা মা’র সঙ্গে কুৎসিত গলায় ঝগড়া করেন। গালাগালি করেন। মা নির্বিকার। আমার বয়স যখন পাঁচ হল তখন আমাকে বললেন, রূপা, তোকে তো এখন একটা স্কুলে দিতে হয়। ঘুরে ঘুরে জীবন পার করলে হবে না। আমাকে থিতু হতে হবে। আমি এখন একটা বাসা ভাড়া নেব। সম্ভব হলেএকটা বাড়ি কিনে নেব। আমি বললাম, টাকা পাবে কোথায়? মা বললেন, টাকা আছে। তোর বাবার একটা পয়সাও খরচ করিনি,জমা করে রেখেছি।
বাবা বিদেশি এক দূতাবাসে চাকরি করতেন। চাকরিকালীন রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা যান বলে ইনশুরেন্স থেকে এবং দূতাবাস থেকে বেশ ভাল টাকাই পেয়েছিলেন। মা সেই টাকার অনেকখানি খরচ করে নয়াটোলায় দোতলা এক বাড়ি কিনে ফেললেন। বেশ বড় বাড়ি। প্রায় এক বিঘা জমি নিয়ে বাড়ি। একতলা দোতলা মিলে অনেকগুলি ঘর। ভেতরের দিকে দুটো আমগাছ, একটা সজনেগাছ, একটা কাঁঠালগাছ। বাড়ি পুরান হলেও সব মিলিয়ে খুব সুন্দর। একতলাটা পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া হল। আমরা থাকি দোতলায়। পাঁচিল দিয়েঘেরা বাড়ি। মা সেই পাঁচিল আরও উঁচু করলেন। ভারী গেটকরলেন। একজন দারোয়ান রাখলেন। আমাদের নতুন জীবন শুরুহল।
নতুন জীবন অনেক আনন্দময় হওয়া উচিত ছিল। মামাদের ঝগড়া গালাগালি নেই। অভাব-অনটন নেই। এত বড় দোতলায়আমরা দুজনমাত্র মানুষ। বাড়িটাও সুন্দর। দোতলায় রেলিং দেয়া টানা বারান্দাও আছে। আমার খেলার সঙ্গীসাথিও আছে। একতলার ভাড়াটের দুটি আমার বয়েসি যমজ মেয়ে আছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের নিজস্ব বাড়িতে আমার ভয়াবহজীবন শুরু হল। মা সারাক্ষণ আমাকে আগলে রাখেন। নিজে স্কুলে নিয়ে যান, যে-চারঘণ্টা স্কুল চলে মা মাঠে বসেথাকেন। ছুটি হলে আমাকে নিয়ে বাসায় ফেরেন। দুপুরে খাবার পরই আমাকে আমার ঘরে আটকে দেন। ঘুমুতে হবে। বিকেলে যদি বলি, মা নিচে খেলতে যাই? তিনি গম্ভীর মুখে বলেন, না। দোতলার বারান্দায় বসে খেলো। খেলার জন্যে নিচেযেতে হবে কেন?
‘নিচে গেলে কী হবে মা?’
‘তুমি নিচে গেলে আমি এখানে একা একা কী করব?’
আসল কথা হচ্ছে মা’র নিঃসঙ্গতা। আমি তাঁর একমাত্র সঙ্গী। সেই সঙ্গী তিনি এক মুহূর্তের জন্যেও চোখের আড়াল করবেন না। দিনের পর দিন রাগারাগি করেছি, কান্নাকাটি করেছি, কোনো লাভ হয়নি।
কতবার বলেছি, মা সবাই কত জায়গায় বেড়াতেযায় – চলো আমরাও যাই। বেড়িয়ে আসি।
‘কোথায় যাবে?’
‘চলো কক্সবাজার যাই।’
‘না।’ ‘তা হলে চল অন্য কোথাও যাই।’
‘ঢাকার বাইরে যেতে আমার ইচ্ছা করে না।’
‘ঢাকার ভেতরেই কোথাও যাই চলো।’
‘কোথায় যেতে চাস?’
‘মামাদের বাড়ি।’
‘না।’
‘বাবাদের দেশের বাড়িতে যাবে মা? বড়চাচা তো লিখেছেন যেতে।’
‘সেই চিঠি তুমি পড়েছ?’
‘হ্যাঁ।’
‘কেন পড়লে? আমি বলিনি – আমার কাছে লেখা কোনো চিঠি তুমি পড়বে না? বলেছি, না বলিনি?’
‘বলেছ।’
‘তা হলে কেন পড়েছ?’
‘আর পড়ব না মা।’
‘এইভাবে বললে হবে না। চেয়ারের উপর উঠে দাঁড়াও। কানে ধরো। কানে ধরে বলো- আর পড়ব না।’
মা’র চরিত্রে অস্বাভাবিকতার বীজ আগে থেকেই ছিল। যত দিন যেতে লাগল তত তা বাড়তে লাগল। মানুষের মানিয়ে চলার ক্ষমতা অসাধারণ। আমি মা’র সঙ্গে মানিয়ে চলার চেষ্টা করতে লাগলাম, এবং চলতেও লাগলাম। নিজের মনে থাকি। প্রচুর গল্পের বই পড়ি। মাঝে মাঝে অসহ্য রাগ লাগে। সেই রাগ নিজের মধ্যে রাখি, মা’কে জানতেদিই না। আমার বয়স অল্প হলেও আমি ততদিনে বুঝে গিয়েছি– আমিই মা’র একমাত্র অবলম্বন। তাঁর সমস্ত জগৎ, সমস্ত পৃথিবী আমাকে নিয়েই।
মাঝে মাঝে মা এমনসব অন্যায়করেন যা ক্ষমার অযোগ্য। আমি সেই অপরাধও ক্ষমা করে দেই। একটা উদাহরণ দিই। আমি সেবার ক্লাস নাইনে উঠেছি। যারা এসএসসি পরীক্ষা দেবে তাদের ফেয়ারওয়েল হচ্ছে। ফেয়ারওয়েলে নাটক করা হবে। আমাকে নাটকে একটা পার্ট দেয়াহল। আমার উৎসাহের সীমা রইল না। মাকে কিছুই জানালাম না। জানালে মা নাটক করতে দেবেন না। মা জেনে গেলেন। গম্ভীর হয়ে রইলেন। কিছু বললেন না। আমি মাকে সহজ করার অনেক চেষ্টা করলাম। মা সহজ হলেন না। যেদিন নাটক হবে তার আগের রাতে খাবার টেবিলে মা প্রথমবারের মতো বললেন, তোমাদের নাটকের নাম কী?
আমি উৎসাহের সঙ্গে বললাম – হাসির নাটক মা। নাম হচ্ছে – দুই দুগুণে পনেরো। দম-ফাটানো হাসির নাটক।
‘তোমার চরিত্রটা কী?’
‘আমি হচ্ছি বড় বোন, পাগলাটে ধরনের মেয়ে। তাকে যে-কাজটি করতে বলা হয় সেসব সময় তার উলটো কাজটি করে। তারপর খুবঅবাক হয়ে বলে – Oh my god, এটা কী করলাম! আমার অভিনয় খুব ভাল হচ্ছে মা। আমাদের বড়আপা গতকালই আমাকে ডেকেনিয়ে বলেছেন – আমার ভেতর অভিনয়ের জন্মগত প্রতিভা আছে। চর্চা করলে আমি খুব নাম করব। মা, তুমি কি নাটকটা দেখবে?’
‘না।’
‘দেখতে চাইলে দেখতে পারবে। এই অনুষ্ঠানে গার্জিয়ানরা আসতে পারবেন না। তবে বড় আপা বলেছেন, যারা অভিনয় করছে তাদের মা’রা ইচ্ছে করলে আসতে পারবেন। তুমি যাবে মা? চল-না! প্লীজ!’
মা শুকনো বললেন, দেখি।
‘তুমি গেলে আমি অসম্ভব খুশি হব মা। অসম্ভব, অসম্ভব, অসম্ভব খুশি হব। এত খুশি হব যে চিৎকারকরে কাঁদব।’
মা কিছু বললেন না। আমার মনে ক্ষীণ আশা হল যে মা হয়তো যাবেন। আনন্দে সারারাত আমি ঘুমুতে পারলাম না। তন্দ্রামতো আসে আবার তন্দ্রা ভেঙ্গে যায়।কী যে আনন্দ!
ভোরবেলা দরজা খুলে বেরুতে গিয়ে দেখি দরজা বাইরে থেকে তালাবন্ধ। আমি চেঁচিয়ে ডাকলাম, মা-মা-মা!
মা এলেন। আমি চেঁচিয়ে বললাম, তালাবন্ধ করে রেখেছ কেন মা?
মা শীতল গলায় বললেন, আমি অনেক চিন্তা করে দেখলাম তোমার অভিনয় করা ঠিক হবে না।
‘কী বলছ তুমি মা!’
‘যা সত্যি তা-ই বলছি।’
‘স্কুলে আপারা কী মনে করবেন মা। আমি না গেলে নাটক হবে না।’
‘না হলে না হবে। নাটক এমন-কিছু বড় জিনিস না।’
‘পরেযখন স্কুলে যাব ওদের আমি কী বলব?’
‘বলবি অসুখ হয়েছিল। মানুষের অসুখ হয় না?’
আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম, ঠিক আছে মা, আমি স্কুলে যাব না। তুমি তালা খুলে দাও।
‘তালা সন্ধ্যার সময় খুলব।’
আমি যাচ্ছি না দেখে স্কুলের এক আপা আমাকে নিতে এলেন, মা তাঁকে বললেন, মেয়েটা অসুস্থ। খুবই অসুস্থ। সে মামার বাড়িতে আছে।
একবার ভাবলাম চিৎকার করে বলি – আপা, আমি বাড়িতেই আছি, মা আমাকে তালাবন্ধ করে রেখেছে। পরমুহূর্তেই মনে হল – থাক।
মা তালা খুললেন সন্ধ্যাবেলায়। তাঁকেকিছুমাত্র লজ্জিত বা দুঃখিত মনে হল না। শুধু রাতে আমার সঙ্গে ঘুমুতে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে ব্যাকুল হয়ে কাঁদতে লাগলেন। কান্না দেখে আমি মা’র অপরাধ ক্ষমা করেদিলাম।

আমি যখন ক্লাস টেনে উঠলাম তখন মা আরওএকটি বড় ধরনের অপরাধ করলেন। আমাদের একতলায় তখন নতুনভাড়াটে। তাদের বড় ছেলের নাম আবীর। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজিতে অনার্স পড়েন। লাজুক-স্বভাবের ছেলে। কখনো আমার দিকে চোখ তুলে তাকান না। যতবার আমার সঙ্গে দেখা হয় তিনি লজ্জায় লাল হয়ে যান। আমি ভেবে পাই না আমাকে দেখে উনি এত লজ্জা পান কেন। আমি কী করেছি? আমি তোতাঁর সঙ্গে কথাও বলি না! তাঁর দিকে তাকাইও না।
একদিন সন্ধ্যাবেলা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ছাদে গিয়েছি, দেখি উনি ছাদে হাঁটাহাঁটি করছেন। আমাকে দেখে চমকে উঠেবললেন, আমার বাবা আমাকে আপনাদের এই ছাদটা দেখতে পাঠিয়েছেন। এইজন্যে ছাদে এসেছি। অন্যকিছু না।
আমি বললাম, ছাদ দেখতে পাঠিয়েছেন কেন?
‘আমার বড়বোনের মেয়েহয়েছে। এই বাসায় ওর আকিকা হবে। বাবা বললেন ছাদে প্যান্ডেল করে লোক খাওয়াবেন যদি ছাদটা বড় হয়।’
‘ছাদটাকি বড়?’
‘বড় না। তবে খুব সুন্দর। আমি যদি কিছুক্ষণ ছাদে থাকি আপনার মাকি রাগ করবেন?’
‘না, রাগ করবেন কেন?’
‘ওঁকে দেখলেই মনে হয় আমার উপর উনি খুব রাগ করে আছেন। আমার কেন জানি মনে হয় উনি আমাকে সহ্য করতে পারেন না।’
আমি হাসতে হাসতে বললাম, আপনি শুধুশুধু ভয় পাচ্ছেন। মা শুধু আমার উপর রাগ করেন। আর কারও উপর রাগ করেন না।
তিনি বললেন, আপনি যে এতক্ষণ ছাদে আছেন, আমার সঙ্গে কথা বলছেন, এটা জানতে পারলে আপনার মা খুব রাগ করবেন।’
‘রাগ করবেন কেন? আর আপনি আমাকে আপনি-আপনি করছেন কেন? শুনতে বিশ্রী লাগছে। আমিআপনার ছোটবোন মীরার চেয়েও বয়সে ছোট। আমাকে তুমি করেবলবেন।’
মনে হল আমার কথা শুনে তিনি খুব ঘাবড়ে গেলেন। আমার দারুণ মজা লাগল। উনি অনেকক্ষণ চুপচাপ থেকেবললেন, আপনি কি – মানে তুমি কি রোজ ছাদে এসে চা খাও?’
‘হ্যাঁ, হেঁটে হেঁটে চা খেতে আমার খুব ভাল লাগে। হেঁটে হেঁটে চা খাই, আর নিজের সঙ্গে গল্প করি।’
‘নিজের সঙ্গে গল্প কর মানে?’
‘আমার তো গল্প করার কেউ নেই, এইজন্যে নিজের সঙ্গে গল্প করি। আমি একটা প্রশ্ন করি। আবার আমিই উত্তর দিই। আচ্ছা, আপনি চা খাবেন? আপনার জন্যে চা নিয়ে আসব?
‘না – না – না ।’
‘এরকম চমকে উঠে না-না করছেন কেন? আপনার জন্যে আলাদা করে চা বানাতে হবে না। মা একটা বড় টী-পটে চা বানিয়ে রেখে দেন। একটু পর পর চা খান। আমি সেখান থেকে ঢেলে এক কাপ চা নিয়ে আসব। আপনি আমার মতো হাঁটতে হাঁটতে চা খেয়ে দেখুন আপনার ভাল লাগবে।’
‘ইয়ে, তা হলে – দুকাপচা আনো। দুজনে মিলেই খাই। তোমার মা জানতে পারলে আবার রাগ করবেন না তো?’
‘না, রাগ করবেন না।’
আমি ট্রেতে করে দুকাপ চা নিয়ে ছাদের সিঁড়ির দিকে যাচ্ছি – মা ডাকলেন, বুড়ি, এদিকে আয়। কী ব্যাপার? চা কার জন্যে নিয়ে যাচ্ছিস?
আমি মা’র কথা বলার ভঙ্গিতে ভয়ানক চমকে উঠলাম। কী ভয়ংকর লাগছে মাকে। হিংস্র কোনো পশুর মতো দেখাচ্ছে। তাঁর মুখে ফেনা জমে গেছে। চোখ টকটকে লাল।
‘তুই কি আবীর ছেলেটির জন্যে চা নিয়ে যাচ্ছিস?’
‘হ্যাঁ।’
‘এতক্ষণ কি ছাদে তার সঙ্গে কথা বলছিলি?’
‘হু।’
‘ও কি তোর হাত ধরেছে?’
আমি হতভম্ব হয়ে বললাম, এসব কী বলছ মা!
‘হ্যাঁ কি না?’
‘মা, আমি শুধু দু-একটা কথা …’
‘শোন বুড়ি, তুই এখনআমার সঙ্গে নিচে জাবি। ঐ বদ ছেলের মাকে তুই বলবি – আপনার ছেলে আমার গায়ে হাত দিয়েছে। আমি ঐ বদ ছেলেকে শিক্ষা দেব, তারপর বাড়ি থেকে তাড়াব। কাল দিনের মধ্যেইএই বদ পরিবারটাকে বাড়ির বাইরে বের করে দিতে হবে।’
আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম, এসব তুমি কী বলছ মা!
মা হিসহিস করে বললেন, আমি যা বললাম তা যদি না করিস, আমিতোকে খুন করব। আল্লার কসম আমি তোকে খুন করব। আয় আমার সঙ্গে, আয় বললাম, আয়।
আমি কাঁদতে কাঁদতে মা’র সঙ্গে নিচে গেলাম। মা আবীরের মাকে কঠিন গলায় বললেন, আপনার ছেলে আমার মেয়ের গায়ে হাত দিয়েছে। আপনার ছেলেকেডেকে আনুন। এর বিচার করুন।
ছেলের মা হতভম্ব হয়ে বললেন, আপা, আপনি এসব কী বলছেন! আমার ছেলে এরকম নয়। আপনি ভুল সন্দেহ করছেন। আবীর এমন নোংরা কাজ কখনো করবে না।
‘আপনি আপনার ছেলেকে ডেকে আনুন। আমি তার সামনেই কথা বলব।’
উনি এসে দাঁড়ালেন। লজ্জায় ভয়ে বেচারা এতটুকু হয়ে গেছে। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।মা আমাকে বললেন, বুড়ি বল, বল তুই। এই বদ ছেলে কি তোর গায়ে হাত দিয়েছে? সত্য কথা বল। সত্য কথা না বললে তোকে খুন করে ফেল্ব। বল এই ছেলে কি তোর গায়ে হাত দিয়েছে?
আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম, হ্যাঁ, দিয়েছে।
‘বুকে হায় দিয়েছে কিনা বল। দিয়েছে বুকে হাত?’
‘হ্যাঁ।’
মা কঠিন গলায় বললেন, আপনি নিজের কানে শুনলেন আমার মেয়ে কী বলল, এখন ছেলেকে শাস্তি দেবেন বা দেবেননা সেতা আপনাদের ব্যাপার। আমার কথা হল আগামীকাল, দুপুরের আগে আপনারা এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন।
আমি এক পলকের জন্যে তাকালাম আবীর ভাইয়ের দিকে। তিনি পলকহীন চোখে আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। সেই চোখে রাগ, ঘৃণা বাদুঃখ নেই, শুধুই বিস্ময়।
তাঁরা পরদিন দুপুরে সত্যি সত্যি বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন। রাতে মা আমার সঙ্গে ঘুমুতে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদতে লাগলেন। আমি মনে মনে বললাম, মা তোমাকে আমি ক্ষমা করতে চেষ্টা করছি, পারছি না। তুমি এমন করে কেঁদো না মা। আমার কষ্ট হচ্ছে। এমনিতেই অনেক কষ্ট পেয়েছি। আর কষ্ট দিও না।

প্রথম পর্যায়ের লেখা এই পর্যন্তই। তারিখ দেয়া আছে। সময় লেখা – রাত দুটা পনেরো। সময়ের নিচে লেখা – একটানাঅনেকক্ষণ লিখলাম। ঘুম পাচ্ছে। এখন ঘুমুতে যাব। মা আমার বিছানায় এসে শুয়েছেন। আজ সারাদিন হাঁপানিতে কষ্টপেয়েছেন। এখন সম্ভবত হাঁপানিটা কমেছে। আরাম করে ঘুমুচ্ছেন। আজ সারাদিন মা’র নামাজ কাজা হয়েছে। ঘুম ভাঙলে কাজ নামাজ শুরু করবেন। রাত পার করে দেবেন নামাজে। কাজেই মা’র ঘুম না ভাঙ্গিয়ে খুব সাবধানে বিছানায় যেতে হবে।
মিসির আলি তাঁর নোটবই বের করে পয়েন্ট নোট করতে বসলেন। পয়েন্ট একটিই – মেয়ের মা’র চরিত্রে যে- অস্বাভাবিকতা আছে তা মেয়ের মধ্যেও চলে এসেছে। মেয়ে নিজে তা জানে না। সে নিজেকে যতটা স্বাভাবিক ভাবছে তত স্বাভাবিক সে নয়। একটি স্বাভাবিক মেয়ে তার মৃত বাবারজন্যে অনেক বেশি ব্যস্ততা দেখাত। এত বড় একটি লেখার কোথাও সে বাবার নাম উল্লেখ করেনি। এমন না যে বাবার নাম তার অজানা। মা’র সম্পর্কে রূপবতী শব্দটি সে ব্যবহার করেছে – বাবা সম্পর্কে কিছুই বলেনি। তার মা এত বড়একটা কাণ্ড করার পরেও মা’র কষ্টটাই তার কাছে প্রধানহয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেকে সে মা’র কাছ থেকে আলাদা করতেপারছে না। এর ফলাফল সাধারণত শুভ হয় না। এত বড় ঘটনারপরেও যে মা’র কাছ থেকে নিজেকে আলাদা করতে পারছে না সে আর কোনোদিনও পারবে না।
মিসির আলি রূপার খাতার পাতা ওল্টালেন।

No comments