Header Ads

test

মাদার তেরেসা (১৯১০ - ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দ)


মাদার তেরেসা (১৯১০ - ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দ)

মানুষের মাঝে যিনি খুঁজে পেয়েছিলেন ঈশ্বরকে, যার কাছে ছিল না কোনো জাতি-ধর্মের ভেদাভেদ, মানবসেবাকেই ধর্ম হিসেবে নিয়েছিলেন যিনি, তিনিই মাদার তেরেসা।

তার আসল নাম আগনেস গঞ্জা বয়াজু। মেসিডোনিয়ার স্কোপি শহরে ১৯১০ সালের ২৬ আগস্ট একটি ক্যাথলিক পরিবারে জন্ম মাদার তেরেসার। জন্মশহর স্কোপিতে প্রাথমিক লেখাপড়া সম্পন্ন করেন তিনি। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট।

১৯১৯ সালে মাত্র ৯ বছর বয়সে মাদার তেরেসা পিতৃহারা হন। আকস্মিক এ বিপর্যয়ের ফলে তেরেসার মা ভীষণ মুষড়ে পড়েন। জীবনের এ সংগ্রাম থেকে দারিদ্র্য আর প্রতিকূলতাকে সাহস ও উদ্দীপনার সঙ্গে গ্রহণ করার তৎপরতা আবিষ্কার করেন মাদার তেরেসা। পিতার মৃত্যুর পর মা তাকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শে লালন-পালন করেন।

মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি সন্যাসব্রত গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন তেরেসা। ১৯২৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর গৃহত্যাগ করে ‘সিস্টার্স অব লরেটো’ সংস্থায় যোগ দেন সিস্টার হিসেবে। মা আর দিদিদের সঙ্গে মাদার তেরেসার আর কোনোদিন দেখা হয়নি।

তৎকালীন সময়ে ভারতে বাংলায় ধর্মীয় কাজ করতেন যুগোস্নাভিয়া ধর্মযাজকরা। তাদের সিদ্ধান্ত ছিল লরেটা সিস্টারদের মধ্যে যারা আইরিশ সম্প্রদায়ভুক্ত তারা যাবেন ভারতবর্ষের মতো এলাকায় কাজ করতে। মাদার তেরেসা তাই তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ শুরু করতে চাইলেন। ১৯২৯ সালের ৬ জানুয়ারি কলকাতা পৌঁছলেন। ১৯৩১ সালের ২৪ মে সর্বপ্রথম দারিদ্র্য, বাধ্যতা ও সংযমের সাময়িক সংকল্প গ্রহণ করেন তেরেসা। লরেটো কনভেন্ট স্কুলে শুরু হলো তার শিক্ষিকা জীবন। পাশাপাশি তিনি একটি হাসপাতালেও কাজ করতেন। এখানেই সর্বপ্রথম দুঃখ ও দারিদ্র্যের সঙ্গে তাকে সংগ্রাম করতে হয়, যা ছিল তার কল্পনারও বাইরে। শিক্ষিকা হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত ভালো এবং সফল। ১৯৩৭ সালের ১৪ মে সিস্টার তেরেসা তার জীবনের গতি পরিবর্তনের চিন্তা করে সন্ন্যাসিনীর জীবন বেছে নিলেন। এদিন থেকেই সিস্টার তেরেসা হয়ে উঠেন মাদার তেরেসা। শুরু হয় অন্যরকম পথচলা।

দরিদ্রের মাঝে মিশনারি কাজ শুরু করেন মাদার তেরেসা। তিনি প্রথাগত লোরেটো অভ্যাস ত্যাগ করেন। পোশাক হিসেবে পরিধান করেন নীল পারের একটি সাধারণ সাদা সুতির বস্ত্র। ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বস্তি এলাকায় কাজ শুরু করেন। ১৯৫০ সালে কলকাতায় তিনি মিশনারিজ অব চ্যারিটি নামে একটি সেবাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।

আর্তমানবতার প্রতীক মাদার তেরেসা সারাটা জীবন কাজের মধ্যে ডুবে ছিলেন। ১৯৮৩ সালে তার প্রথম অসুস্থতা ধরা পড়ে। পরে তার হৃদরোগ ধরা পড়লে বুকে পেসমেকার লাগানো হয়। তাতেও আরোগ্য লাভ হয়নি। কারণ অসুস্থতা নিয়েও তিনি কাজের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ছুটে বেড়াতেন। তার হৃদযন্ত্রে বাইপাস সার্জারিও করা হয়েছিল কিন্তু তার ছুটে চলা থেমে থাকেনি। ধীরে ধীরে এভাবেই ঘনিয়ে আসে তার অন্তিম মুহূর্ত। অবশেষে ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কলকাতার মাদার হাউসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই মহাত্মা নারী। মাদার তেরেসা আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু মানবতার প্রতীক হিসেবে তিনি অমর হয়ে থাকবেন বিশ্ববাসীর কাছে। 

No comments