Header Ads

test

নেলসন ম্যান্ডেলা (১৯১৮ - ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ)


নেলসন ম্যান্ডেলা (১৯১৮ - ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ)

নেলসন রোলিহালালা ম্যান্ডেলা ১৯১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রান্সকিতে জন্মগ্রহণ করেন।তার বাবা হেনরি মেন্ডেলা টেম্বু উপজাতির প্রধান ছিলেন। মেন্ডেলা প্রথমে ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও পরে উইট ওয়াটারসরেন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। ১৯৪২ সালে তিনি আইন বিষয়ে ডিগ্রি নেন। ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত তিনি ন্যাশনাল পার্টির দমন-পীড়ন নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন এবং ১৯৫৬-৬১ সাল পর্যন্ত কারাবরণ করেন। পারিবারিকভাবে আয়োজিত বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে তিনি জোহানেসবার্গে একটি আইন প্রতিষ্ঠাআনে শিক্ষানবিশ হিসাবে যোগ দেন। ঐ বছরগুলোতে বর্ণ-বৈষম্যের তিক্ত ছবিগুলো তার মনে গভীর রেখাপাত করে। তিনি অনুভব করেন ঔপনিবেশিক প্রক্রিয়ায় কীভাবে কালো মানুষগুলোকে কী করে না মানুষের পর্যায়ে নামিয়া আনা হয়েছে। এরকম অবস্থায় তিনি বিদ্যমান আইন-কানুনের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলন শুরু করেন।যোগদেন এ এন সি তে। ১৯৬০ সালে সার্পভিলে কালোদের অধিকার খর্ব করে এমন একটি আইনের প্রতিবাদ করার সময় নারী ও পুরুষের উপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে মারা যায় ৬৯ জন,এসময় এ এন সি কে নিষিদ্ধ করা হয়।
    
নেলসন গুপ্ত সামরিক শাখা গঠন করলে তাকে গ্রেফটার করে জোহানেসবার্গের কারাগারে রাখা হয়। ১৯৬৪সালে তাকে রোবেন দ্বীপে পাঠানো হয়।২৭ বছরের কারাজীবনে ১৮ জীবনেই তিনি এখানে ছিলেন। রোবেন দ্বীপের এ কারাগারকে তিনি আখ্যা দিয়েছিলেন রোবেন ইউনিভার্সিটি। জেলে থাকার সময়ে বিশ্বজুড়ে তাঁর খ্যাতি বাড়তে থাকে। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৃষ্ণাঙ্গ নেতা হিসাবে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন। সশ্রম কারাদণ্ডের অংশ হিসাবে রবেন দ্বীপের কারাগারে ম্যান্ডেলা ও তাঁর সহবন্দীরা একটি চুনাপাথরের খনিতে শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে বাধ্য হন।কারাগারের অবস্থা ছিলো বেশ শোচনীয়। কারাগারেও বর্ণভেদ প্রথা চালু ছিলো। কৃষ্ণাঙ্গ বন্দীদের সবচেয়ে কম খাবার দেয়া হতো। সাধারণ অপরাধীদের থেকে রাজনৈতিক বন্দীদের আলাদা রাখা হতো। রাজনৈতিক বন্দীরা সাধারণ অপরাধীদের চাইতেও কম সুযোগ সুবিধা পেতো। ম্যান্ডেলা তাঁর জীবনীতে লিখেছেন, তাঁকে ডি-গ্রুপের বন্দী হিসাবে গণ্য করা হতো, অর্থাৎ সবচেয়ে কম সুবিধাপ্রাপ্ত বন্দীদের তালিকায় তাঁকে রাখা হয়েছিলো। তাঁকে প্রতি ৬ মাসে একটিমাত্র চিঠি দেয়া হতো এবং একজনমাত্র দর্শনার্থীর সাথে দেখা করার অনুমতি দেয়া হতো। ম্যান্ডেলাকে লেখা চিঠি কারাগারের সেন্সরকর্মীরা অনেকদিন ধরে আটকে রাখতো। চিঠি ম্যান্ডেলার হাতে দেয়ার আগে তার অনেক জায়গাই কালি দিয়ে অপাঠযোগ্য করে দেয়া হতো।

কারাগারে থাকার সময়ে ম্যান্ডেলা লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষণ কর্মসূচীর আওতায় পড়াশোনা শুরু করেন এবং আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীকালে ১৯৮১ সালে তাঁকে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দেয়া হয়। কিন্তু তিনি প্রিন্সেস অ্যানের কাছে সেই নির্বাচনে হেরে যান।

দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েন্দা বিভাগের গুপ্তচর গর্ডন উইন্টার ১৯৮১ সালে আত্মজীবনী লিখেন, যার শিরোনাম ছিলো Inside BOSS। এই আত্মজীবনীতে উইন্টার দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের একটি গোপন ষড়যন্ত্রের কথা ফাঁস করে দেন। এই ষড়যন্ত্র অনুসারে ১৯৬৯ সালে ম্যান্ডেলাকে কারাগার থেকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে কারাগারে হামলা চালাবার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। উইন্টারের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার গুপ্তচরেরা এই ষড়যন্ত্রে অংশ নেয় ও মদদ দেয়। উদ্দেশ্য ছিলো, কারাগার থেকে ম্যান্ডেলাকে পালাতে দেয়া, যাতে তাঁকে ধাওয়া করে পুনরায় গ্রেপ্তারের নামে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলা যায়। এই ষড়যন্ত্রের খবর ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা জেনে ফেলায় তা নস্যাত হয়ে যায়।

১৯৮২ সালের মার্চ মাসে ম্যান্ডেলাকে রবেন দ্বীপের কারাগার থেকে পোলস্‌মুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এসময় ম্যান্ডেলার সাথে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের উচ্চপদস্থ নেতা ওয়াল্টার সিসুলু, অ্যান্ড্রু ম্লাগেনি, আহমেদ কাথরাদা এবং রেমন্ড ম্‌লাবাকেও সেখানে নেয়া হয়। ধারণা করা হয়, রবেন দ্বীপে কারারুদ্ধ নতুন প্রজন্মের কৃষ্ণাঙ্গ রাজনৈতিক বন্দীদের উপর ম্যান্ডেলা ও অন্যান্য নেতার প্রভাব কমানোর জন্যই এটা করা হয়। তরুণ কর্মীদের উপরে ম্যান্ডেলা ও তাঁর সহযোদ্ধাদের এই প্রভাবকে ব্যঙ্গ করে “ম্যান্ডেলা বিশ্ববিদ্যালয়” বলা হতো। তবে ন্যাশনাল পার্টির তদানিন্তন মন্ত্রী কোবি কোয়েটসির মতে ম্যান্ডেলাকে স্থানান্তর করার মূল লক্ষ্য ছিলো ম্যান্ডেলার সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের গোপন বৈঠক ও আলোচনার ব্যবস্থা করা।

১৯৮৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার তদানিন্তন রাষ্ট্রপতি পি ডব্লিউ বোথা ম্যান্ডেলাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়ার প্রস্তাব দেন। শর্তটি ছিলো, ম্যান্ডেলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করতে হবে। কোয়েটসি সহ অন্যান্য মন্ত্রীরা অবশ্য বোথার এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। তারা মত প্রকাশ করেন যে, ম্যান্ডেলা ব্যক্তিগত কারামুক্তির লোভে পড়ে কখনোই নিজের সংগঠনকে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ থেকে সরিয়ে আনবেন না। ম্যান্ডেলা আসলেই এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। তিনি তাঁর মেয়ে জিন্দজির মাধ্যমে একটি বিবৃতি দেন, যাতে তিনি বলেন
    
ম্যান্ডেলা ও ন্যাশনাল পার্টি সরকারের মধ্যকার প্রথম আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বর মাসে। কোবি কোয়েটসি ম্যান্ডেলার সাথে কেপ টাউনের ভোক্স হাসপাতালে দেখা করেন। ম্যান্ডেলা তখন প্রস্টেট গ্রন্থির শল্য চিকিৎসা শেষে আরোগ্য লাভ করছিলেন।পরের চার বছর ধরে ম্যান্ডেলার সাথে সরকার একাধিকবার আলোচনায় বসে। কিন্তু এসব আলোচনায় বিশেষ কিছু অগ্রগতি হয়নি।

১৯৮৮ সালে ম্যান্ডেলাকে ভিক্টর ভার্সটার কারাগারে সরিয়ে নেয়া হয়। মুক্তির আগ পর্যন্ত ম্যান্ডেলা এখানেই বন্দী ছিলেন। আস্তে আস্তে তাঁর উপরে কড়াকড়ি কমানো হয় এবং দর্শনার্থীদের সাথে দেখা করার অনুমতি দেয়া হয়। ম্যান্ডেলার ছাত্রজীবনের বন্ধু হ্যারি শোয়ার্জ এসময় তাঁর সাথে দেখা করেন।
    
দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা অনেক দেশের সরকারের কাছেই একসময় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বিশেষ করে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী সরকারের পশ্চিমা মিত্রদের কাছে।
    
দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক থাকা যুক্তরাজ্যের প্রয়াত ‘লৌহমানবী’ মার্গারেট থ্যাচার ম্যান্ডেলার দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসকে (এএনসি) ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে বর্ণনা করেছেন। তবে ২৫ বছর আগে এক জুন মাসে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত একটি কনসার্ট ম্যান্ডেলার ভাবমূর্তি অনেকটাই পাল্টে দেয়।
    
অসুস্থ ম্যান্ডেলা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে সম্প্রতি ১৯৮৮ সালের ১১ জুনের সেই কনসার্টের স্মৃতিচারণা করেছেন আয়োজকদের একজন টনি হলিংসওয়ার্থ (৫৫)। জোহানেসবার্গ সফরকালে হলিংসওয়ার্থ বলেন, তিনি ম্যান্ডেলার একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সংগীতকে কৌশল হিসেবে ব্যবহারের পরামর্শ দেন ব্রিটিশ বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রেসিডেন্ট আর্চবিশপ ট্রেভর হাডলস্টোনকে।
    
আর্চবিশপ ট্রেভর হাডলস্টোন তখন লন্ডন আন্দোলনের প্রধান শিল্পী মাইক টেরি, এএনসিসহ অন্যদের সঙ্গে কনসার্টের ব্যাপারে কথা বলেন। হলিংসওয়ার্থ বলেন, ‘প্রায় ৭০টি দেশে সম্প্রচারিত কনসার্টটি ম্যান্ডেলাকে সন্ত্রাসী থেকে কৃষ্ণাঙ্গদের নেতায় পরিণত করে।’ কনসার্টে মার্কিন গায়ক হ্যারি বেলাফন্টে বলেন, ‘আমরা আজ এখানে এক মহান নেতাকে সম্মান জানাতে সমবেত হয়েছি। তিনি হলেন নেলসন ম্যান্ডেলা।

No comments